চিফ একাউন্টস এন্ড ফিন্যান্স অফিসারের কার্যালয় (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়) এর প্রতিষ্ঠার পটভূমি
বাংলাদেশ সরকারের সমুদয় আয় ও ব্যয়ের হিসাবায়ন এবং তা নিরীক্ষা করার জন্য যে বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ দায়িত্বপ্রাপ্ত তার নাম হলো নিরীক্ষা ও হিসাব বিভাগ। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পূর্বে পাকিস্তানে সরকারি হিসাবরক্ষণের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত দপ্তরের প্রধান ছিলেন Accountant General (East Pakistan), (যিনি সংক্ষেপে AG হিসেবে সম্যক পরিচিত) এবং তৎকালীন ওয়ার্কস, ওয়াপদা, ফরেন অ্যাফেয়ার্স এবং পিটিএন্ডটি বিভাগ ব্যতীত অন্যান্য সিভিল অফিসের হিসাব প্রণয়নসহ সংশ্লিষ্ট অফিসের Post Audit করতেন। তবে ঢাকায় অবস্থিত সিভিল অফিস সমূহের বিল ‘এজি (পূর্ব পাকিস্তান) অফিস’ পাশ করতো এবং ঢাকার বাইরের অফিসসমূহের বিল সংশ্লিষ্ট ‘ট্রেজারি অফিস’ পাশ করতো। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে ১৯৭২ সালে এজি (পূর্ব পাকিস্তান) কে Accountant General (Civil) বা এজি (সিভিল) হিসেবে নামকরণ করা হয়। এজি (সিভিল), এজি (ওয়ার্কস এন্ড ওয়াপদা), এজি (পিটিএন্ডটি), অ্যাডিশনাল এজি (ফরেন অ্যাফেয়ার্স) নতুন নামে প্রতিষ্ঠিত হলেও এ চারটি অফিসের Functional কিছু পরিবর্তন করে পূর্বের ধারাবাহিকতায় কাজ সম্পাদন করতে থাকে।
ডিএও, ইউএও এবং সিএও অফিস প্রতিষ্ঠা:
স্বাধীনতার কিছু পূর্ব থেকেই তৎকালীন এজি (পূর্ব পাকিস্তান) এর নিয়ন্ত্রণাধীন District Accounts Office (DAO) প্রতিষ্ঠা শুরু হয়। বাংলাদেশ সরকারের হিসাব পদ্ধতিকে আরো গতিশীল করার জন্য ১৯৮৫ সালে অর্থ বিভাগের একটি অফিস স্মারক (office memorandum) এর মাধ্যমে Controller General of Accounts (CGA) কার্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় যা পূর্বে এজি (সিভিল) নামে পরিচিত ছিল। ১৯৮২ থেকে ১৯৮৫ সময়কালে বাংলাদেশে পূর্বতন Sub-division গুলোকে জেলায় রূপান্তর করার মাধ্যমে দেশের মোট জেলার সংখ্যা হয় ৬৪টি। এসময় ৪৩টি ডিএও প্রতিষ্ঠা করা হয়। তাছাড়া উল্লিখিত সময়েই উপজেলা তৈরির সাথে সাথে Upazilla Accounts Office (UAO) প্রতিষ্ঠা করা হয়।
১৯৮৫ সালে একাউন্টেন্ট জেনারেল (সিভিল), একাউন্টেন্ট জেনারেল (ওয়ার্কস এন্ড ওয়াপদা), একাউন্টেন্ট জেনারেল (পিটিএন্ডটি) এবং অ্যাডিশনাল একাউন্টেন্ট জেনারেল (ফরেন অ্যাফেয়ার্স) অফিসগুলোকে ‘বিল পাশের’ দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগভিত্তিক ‘Chief Accounts Officer (CAO) বা প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা (সিএও)’ কার্যালয় গঠনের একটি সরকারি সিদ্ধান্ত হয়। উক্ত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে প্রাথমিকভাবে ২০টি সিএও অফিস প্রতিষ্ঠা করে তা সরাসরি সিজিএ এর প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণাধীন করা হয়। উল্লেখ্য যে, এ সময়ে প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের জন্য একটি সিএও অফিস এবং ছোট ছোট একাধিক মন্ত্রণালয়ের জন্য একটি সিএও অফিস ছিল। পরবর্তীতে ২০০২ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত প্রতিটি মন্ত্রণালয় বা বিভাগের জন্য একটি করে সিএও কার্যালয় সৃষ্টি করা হয়। এরপর থেকে ২০টি সিএও অফিসের পরিবর্তে ধাপে ধাপে বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে মোট ৫০টি সিএও অফিস তার কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। পরবর্তীতে অর্থ বিভাগের ১৮.১১.২০১৯ তারিখের অফিস আদেশের মাধ্যমে Chief Accounts Officer (CAO) এর পদনাম পরিবর্তিত হয়ে Chief Accounts and Finance Officer, (শব্দ সংক্ষেপ CAFO) হিসেবে পরিচিতি পায়। সিজিএ অফিসের অধীনে বর্তমানে ৫০টি সিএএফও, ০৮টি ডিভিশনাল একাউন্টস অফিস, ৫৬টি ডিএএফও অফিস এবং ৪৩৪টি ইউএও অফিস রয়েছে (ডিসেম্বর, ২০২৪ পর্যন্ত)।
সিএএফও, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দপ্তর :
বর্তমান সিএএফও, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কার্যালয় মূলত অর্থ বিভাগের ২৩.০১.১৯৮৫ তারিখের একটি অফিস স্মারক (Office memorandum) এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা পেয়ে কার্যক্রম শুরু করে। এখানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং তার অধীন অফিসগুলোর আর্থিক দাবিসমূহ পূর্ব নিরীক্ষা (Pre Audit) এর মাধ্যমে পরিশোধ সংক্রান্ত কাজ সম্পাদিত হয়। এর কার্যক্রমের পরিধিতে সমগ্র দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করে এমন বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অফিস, যেমন-পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, কোস্ট গার্ড, আনসার, ফায়ার সার্ভিস ইত্যাদি রয়েছে। এ কার্যালয়ের নিজস্ব বিল এবং উল্লিখিত অন্যান্য অফিসসমূহের পেনশন সংক্রান্ত যাবতীয় আর্থিক দাবি এ অফিসের মাধ্যমেই নিষ্পত্তি হয়। জনসেবায় কর্মমুখর এই দপ্তর বিভিন্ন সেবার মানোন্নয়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।